ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর আমার অন্যতম প্রিয় একজন ইসলামী বক্তা, আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। উনার লিখা বইগুলো পড়ার অনেকদিনের ইচ্ছে, গতবছর কুষ্টিয়ায় বেড়াতে গিয়ে একজনের বাসায় এই বইটা কিছুটা পড়া হইছিলো। এরপর কোটা আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে এইটার পিডিএফ পড়ছি। লেখক এই বইয়ে সমাজে প্রচলিত জাল/মিথ্যা হাদিস ও ইসলামের নামে ভিত্তিহীন কথাগুলো তুলে ধরেছেন। এইটা না পড়লে জানতামই না যে এতো এতো জাল হাদিস রয়েছে। বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৫৬, বই এতো বড় হওয়ার একটি কারণ হলো, প্রায় সকল বিষয়ে বানোয়াট হাদীসগুলো আলোচনার সময় সে বিষয়ে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলোর বিষয়ে কিছু আলোকপাত করতে হয়েছে। দুটি কারণে তা করতে হয়েছে: প্রথমত: অনেক সময় জালিয়াতগণ জাল হাদীস তৈরি করার সময় সহীহ হাদীসের কিছু শব্দ ও বাক্য তার সাথে জুড়ে দেয়। এছাড়া অনুবাদের কারণে অনেক সময় জাল ও সহীহ হাদীসের অর্থ কাছাকাছি মনে হয়। এজন্য শুধু জাল হাদীসটি উল্লেখ করলে সাধারণ পাঠকের মনে হতে পারে যে, এ বিষয়ে সকল হাদীসই বুঝি জাল। অথবা, এ অর্থের একটি হাদীস অমুক গ্রন্থে রয়েছে, কাজেই তা জাল হয় কিভাবে। দ্বিতীয়ত: শুধু জাল হাদীস চিহ্নিত করাই এই বইয়ের উদ্দেশ্য নয়, বিশ্বাসে ও কর্মে জাল হাদীস বর্জন করে সহীহ হাদীসের উপর আমল করে নিজেদের নাজাতের জন্য চেষ্টা করা। এজন্য জাল হাদীস উল্লেখের সময় সে বিষয়ক সহীহ হাদীসগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে হলেও আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আমাদের কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী চলতে হবে, জাল হাদিস থেকে সাবধান থাকতে হবে।
আমাদের সমাজে সহীহ হাদিসের চেয়ে জাল হাদিসের সংখ্যা বেশি। বইটি পড়ে বোঝা যায় কত জাল হাদিস শুনে তার উপর আমল করে বেড়ে উঠেছি আমরা, বেড়ে উঠছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। হাদিসের নামে জালিয়াতি নিঃসন্দেহে জাহান্নামের দ্বার উন্মোচিত করে। তাই সহীহ হাদিস জেনে আমল করা এবং সমাজের প্রচলিত জাল হাদিস সম্পর্কে এটি একটি অবশ্য পাঠ্য বই।
জালিয়াতি শব্দের সাথে আমাদের বহুল পরিচিতি ঘটলেও যে পরিচিতির সাথে আমরা অধিকাংশই অপরিচিত তা হল হাদিসের নামে জালিয়াতি। যদিও মহান আল্লাহ কুরআন-হাদিসের সুরক্ষা দিয়েছেন তথাপি শয়তানের প্ররোচনা আর মানুষের স্বভাবজাত দূষণে এর জালিয়াতি রক্ষা পায়নি। এর উল্লেখযোগ্য কিছু কারন অনুসন্ধানে আমরা দেখতে পাই সাধারন হাদিসপাঠকগণ থেকে শুরু করে নামধারী আলেম অনেকেই হাদিসের কিতাব মানেই তা রাসুল (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর বানী বলে ধরে নেয়, যেটি মোটেই সঠিক নয়। বুখারি এবং মুসলিম অনন্ন উচ্চতা পেলেও অন্যান্য প্রায় অসংখ্য হাদিস গ্রন্থে সহির সাথে দুর্বল হাদিসের সংমিশ্রণ রয়েছে যা নবী (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর বানী বিশুদ্ধতায় উত্তীর্ণ নয়। অন্যদিকে অসংখ্য বানী সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যা আদৌ নবী (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর বানীতো নয়ই এমনকি হাদিস গ্রন্থেও তার স্থান নেই। এসকল দুর্বল বা জাল হাদিসের মিশ্রন থেকে বিশুদ্ধ হাদিস রক্ষায় যুগে যুগে তুখোড় মেধাসম্পন্ন হাদিস বিশেষজ্ঞর জন্ম হয়েছে, যাদেরকে আমরা এক কথায় "Genius" আখ্যা দিতেই পারি। এ সকল জিনিয়াসেরা যাদের ইসলামিক পরিভাষায় মুহাদ্দিস বলে আখ্যায়িত করা হয় তিল তিল করে চুলচেরা বিশ্লেষণে এ সকল জালিয়াতিকে ধ্বংস করে আল্লাহ প্রদত্ব সহায়তায় বিশুদ্ধ হাদিসকে আলাদা করেছেন। এ সকল যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস বা ইমামগনের পাঠদানের পদ্ধতি অচিন দেশে পাঠিয়ে তথাকথিত নাম ধারী বুজুর্গদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অন্যদিকে ইসলাম বিদ্বেষীদের ছলচাতুরীর আড়ালে আটকে গিয়ে আজও হাজারো, লাখো মানুষ লাগামহীন ভাবে রাসুল (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর বানীর নামে অগণিত দুষিত বা মিথ্যে হাদিস অনুসরনে ডুবে আছে। লেখক খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার "হাদীসের নামে জালিয়াতি" এসকল জালিয়াতির ঢালাও উদাহরণ টেনে দেখিয়েছেন রাসুল (সাল্লেল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর বানীর নামে, হাদিসের প্রকৃত ব্যাখ্যা দূরে সরিয়ে কি ভাবে যুগে যুগে হাদিসের নামে জালিয়াতি ঘটেছে এবং সেই সাথে তার প্রকৃত ব্যাখ্যা এবং সঠিক রুপ পাঠককুলে তুলে ধরেছেন। আশা করি বইটি হাদিসের নামে প্রচলিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথার অবসান ঘটাতে পাঠকগনকে বিস্তর সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
যদিও শেষ করতে পারিনি সময়ের অভাবে, যতটুকু পড়েছি তা থেকে উপলব্ধি করেছি এত্ত সুন্দর তথ্যবহুল বই বাংলায় আরও লেখা উচিৎ এতে আমাদের মাঝে (শিয়া,সুন্নী,হানাফি,মাজহাবি, শাফি ইত্যাদি ভেদাভেদ) দূর হবে। দড়ি বাবা, পির বাবা কথিত হাদিস ও জাল ও জয়িফ হাদিস সম্মন্ধে সুনিপুণভাবে তথ্য ও প্রমানের সহিত ভূল প্রপাগাণ্ডা গুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন!
'ওমুক বুজুর্গ কি ভুল করছেন? হতেই পারে না। এটা ভুল হলে উনি কেন করবেন' আমাদের সমাজের প্রাত্যহিক 'ডায়ালগ' বলা চলে এটা, কোনো ভুল হাদিসের ব্যাপারে কাউকে জানালে এই 'ডায়ালগটা' শোনা অনেকটা নিশ্চিতই। মুহাদ্দিসদের অসামান্য চেষ্টার কারণে জাল-বানোয়াট হাদিস আর সহীহ-হাসান হাদীসের পার্থক্য করা গেলেও সেগুলো সবার সামনে আসতে পারেনি! সেটা হতে পারে আমাদের দ্বীন এর ব্যপারে বিমুখতা, একারণে। কিংবা হতে পারে হাদিস জালিয়াতদের চাতুরতার জন্য৷ সমাজে প্রচলিত হাদিসগুলোর বেশীরভাগই বানোয়াট-যঈফ, ভিত্তিই নেই একদম। সরলমনা মুসলমানগণ সেই হাদিস বিশ্বাস করে ভুল পথে চালিত হন। ঠিক এই জিনিসটার জন্যেই সম্ভবত কলম তুলেছিলেন ড.খোন্দকার জাহাঙ্গীর রহিমাহুল্লাহ। সাধারণত হাদিস শব্দটা শুনলে যে কথাটা মাথায় আসে, এটা মাদ্রাসাপড়ুয়া ভাইদের ব্যাপার। তাদের জন্য বোঝা সহজ, কিন্তু সর্বসাধারণদের জন্য বোঝা সহজ নয়। কিন্তু প্রিয় শায়খের লেখা ও লেকচারের সাথে যারা পরিচিত তারা জানেন যে উনার লেকচার-লেখা সবার জন্যেই। প্রায় ৬৫০ পৃষ্ঠার বই, পৃষ্ঠাসংখ্যা আর বিষয় এর নাম শুনে আমার মত 'জেনারেল লাইন' পড়ুয়া একজনের মাথায় আসা স্বাভাবিক যে বইটা হয়তো ততটা ভালোও লাগবে না৷ কিন্তু বইটা শুরু করার পর মনে হয় না একটুও বিরতি দিতে পেরেছি! প্রথম দিক দিয়ে হাদিস এর শুদ্ধতা, শুদ্ধীকরণের ব্যাখ্যাটা একটু কঠিন লাগলেও পরবর্তীতে মূল বর্ণণায় একের পর এক চমকে বই থেকে উঠতে পেরেছি বলে মনে পড়ছে না! তাই তো এত বড় বইটা শেষ করেছি মাত্র দেড় দিনের মত সময়ে! যার পুরো কৃতিত্ব শায়খের অসাধারণ লেখনীর। চমক এর পর চমক ছিল কারণ নিজের জানা বহু হাদিসগুলো যেগুলো এতদিন সহীহ বলে জেনে এসেছি, সেগুলো অধিকাংশই বুঝতে পারলাম যে বানোয়াট-ভিত্তিহীন! শায়খের লেখার বিপক্ষে যে প্রতিবাদ করবো তারও কোনো রাস্তা উনি রাখেননি, সব প্রমাণ তিনি তার লেখার সাথে তুলে ধরেছেন! এত এত রেফারেন্স এর কাছে আমার কোনো প্রতিবাদই টিকবে না। তবে এই কু-যুক্তি দিয়েই আটকাতে পারি, 'যে অমুক বুযুর্গ এইটা বলেছেন, তিনি কি ভুল?' আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সুবহানাল্লাহ আমাকে উক্ত বইটি পড়ার তৌফিক দান করেছেন। অনেক শুকরিয়া, আমার মতে প্রতিটা মুসলিম এর ঘরে ঘরে এই বইটি থাকা উচিত এবং প্রত্যেকের এটি বাধ্যতামূলকভাবে পড়া উচিত। আল্লাহ প্রিয় শায়খের ওপর সন্তুষ্ট থাকুন, আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমীন
বইটি মূলত হাদীস শাস্ত্র বোঝার মূলনীতি নিয়ে লেখা সাথে বর্তমান বাংলাদেশে বিভিন্ন জাল হাদিসগুলি একত্র করা। শায়খ আবদুল্লাহ খোন্দকার জাহাঙ্গীর (রাহি:) এর লেখা নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু বলার নেই সহজ সরল ভাবে অনেক কঠিন বিষয়কে তুলে ধরতে পারেন এবং তেমনি একটি বই এটা। কেও যদি হাদীস কি এবং কিভাবে হাদীস শাস্ত্র গঠন হলো বুঝতে হলে এই বইটি পড়তে পারেন। পাশাপাশি বর্তমান বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন জাল হাদীস গুলা জানার জন্য এইবইটাপড়াউচিত।
অগণিত মাউদূ,জাল,মিথ্যা হাদিস জেনে বড় হইয়েছি। পাঠ্যবইয়েও বেশ কিছু এরকম মাউদূ হাদীস শিখেছি। পাঠকদের প্রতি অনুরোধ বইটি পড়ুন। ইসলামের ওহীর দ্বিতীয় ভিত্তি রাসুল(সাঃ) এর সহীহ হাদীস এবং জালিয়াতদের মাউদূ হাদীস গুলোকে ভালোভাবে চেনার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি বই এটি ৷ কেননা ওহীর বিকৃতি আর সেই বিকৃত ওহী থেকে আমল ইহকাল ও পরকাল দুই জায়গায়ই নিস্ফল। মহাল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সঠিক পথে চলার তওফীক দান করুক। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(রাহিমাহুল্লাহ) কে আল্লাহ সর্বোত্তম পুরষ্কার দান করুক। আমীন
আমরা আমাদের চারপাশে নিজেদের ইচ্ছা অনিচ্ছায় জাল হাদিস শুনে থাকি এবং বলে থাকি। এসব জাল হাদিস অনেকে যাচাই না করে হাদিস হিসেবে মেনে নেয়। আমাদের চারপাশে মুখে বা বইয়ের পাতায় প্রচলিত এসব জাল হাদিস সম্পর্কে জানতে এবং এগুলো থেকে বেঁচে থাকতে আমাদের সবার বইটা পড়া উচিত।